শিষ্টাচার রচনা অথবা, সৌজন্যবোধ অথবা, রচনা আদব - কায়দা
রচনাঃ শিষ্টাচার |
ভূমিকা
ভদ্র এবং শালীনতাসম্পন্ন আচরণকেই শিষ্টাচার বলে। শিষ্টাচার অর্থ লোক সমাজে মানুষের চলাফেরা, কথাবার্তা ও আচার ব্যবহারের ভদ্র ও মার্জিত রূপ। ভদ্রতা ও শিষ্টাচার একই মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ। শিষ্টাচার মানুষের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে। শিষ্টাচার অনুষঙ্গটি কেবল মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। কেননা মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ তার আচরণের শুদ্ধতার মধ্য দিয়েই জীব হিসাবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে থাকে। তাই শিষ্টাচার মনুষ্যত্বেরই অপর নাম। কবির ভাষায় “ শিষ্টাচার উন্নতির প্রবীণ সোপান শিষ্টাচারে মানব হয় মহামহীয়ান । "
শিষ্টাচার কী
শিষ্টাচার কথাটি “শিষ্ট” ও “আচার” কথা দুটির সমন্বিত রূপ। শিষ্ট শব্দের অর্থ সঙ্গত , মার্জিত , সুন্দর বা গ্রহণযোগ্য। আর আচার শব্দের অর্থ রীতি , আচরণ বা অভিব্যক্তি। অতএব , শিষ্টাচার বলতে আমরা বুঝি মানুষের সুন্দর বা ভদ্র জীবনাচরণকে। প্রকৃতপক্ষে শিষ্টাচার একজন মানুষের স্বভাব - স্বরূপ ছাড়া আর কিছুই নয়। জীবন পথে চলতে গিয়ে সামাজিক পটভূমিতে মানুষ শিষ্টাচারের মাধ্যমেই সবার প্রিয়পাত্র হয়ে উঠে।
শিষ্টাচারের লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য
বংশপরিচয় কিংবা পুঁথিগত বিদ্যার্জন বা জ্ঞান দ্বারা প্রকৃত শিষ্টাচার বা আদব - কায়দা অর্জিত হয় না। অনেক পণ্ডিত ও জ্ঞানী ব্যক্তিও তাঁদের অশিষ্ট ও অভদ্র আচরণের জন্য কুখ্যাত হয়েছেন। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের আপামর জনসাধারণের সাথে মার্জিত ও ভদ্র আচরণের মাধ্যমে সবার অকুন্ঠ ভালোবাসা ও সম্মানের পাত্র হওয়াই শিষ্টাচারের লক্ষণ। মার্জিত ও রুচিশীল আচরণ , নম্রতা , ভদ্রতা ইত্যাদি শিষ্টাচারের বৈশিষ্ট্য। তাই কবির ভাষায় “ মনের বাসনা হয় বিনয়ে সফল দ্বেষ - হিংসা ভুলে যায় মোর শত্রুদল। "
বাল্যকাল শিষ্টাচার আয়ত্ত করার প্রকৃষ্ট সময়
শিষ্টাচার বা আদব - কায়দা আয়ত্ত করার প্রকৃষ্ট সময় বাল্যকাল। কাজেই শিশুকাল থেকেই ছেলেমেয়েদের আদব - কায়দা শিক্ষা দেওয়া অভিভাবকদের একান্ত কর্তব্য। বস্তুত শিশুকালই শিক্ষা - দীক্ষার উপযুক্ত সময়। কেননা এ সময়ই শিশুকে যেরূপ ইচ্ছে সেরূপ করে গড়ে তোলা সহজ। তাই প্রত্যেক সচেতন অভিভাবকের উচিত শিশুকালেই আদর্শ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে রেখে বিদ্যার্জনের সাথে সাথে শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া এবং তাদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিশেষ যত্নবান হওয়া। শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক। কাজেই শিশুকাল থেকেই এদের শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়ে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মনীষী শেখ সাদী বলেছেন , “ শৈশবে যে শিষ্টাচার শিখে না ; পরিণত বয়সে তার কাছে ভালো কিছু আশা করা যায় না।”
শিষ্টাচার ও পারিবারিক পরিবেশ
শিষ্টাচার পারিবারিক পরিবেশের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। কাজেই পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যকে তাদের মার্জিত কথাবার্তা ও আচার - আচরণের মাধ্যমে শিশুদের শিষ্টাচারের গুণাবলি শিক্ষা দিতে হবে। পারিবারিক পরিবেশ প্রতিকূল হলে শিশুদের কোনো আদর্শ আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দেওয়া যেতে পারে। অভদ্র আচরণ ও অশালীন কথাবার্তা শিষ্টাচারের পরিপন্থী। শিষ্টাচার মানুষের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। কথাবার্তা , চাল - চলন ও আচার - ব্যবহারে সর্বদা ভদ্র ও মার্জিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধের জন্যই মানুষ সৃষ্টির সেরা। কাজেই আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। আমাদের আচার - আচরণ বা কথাবার্তায় যেন কখনো কোনোরূপ অশিষ্টতা প্রকাশ না পায় সেদিকটি খেয়াল রাখতে হবে।
ব্যক্তিজীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব
একজন মানুষ কোনো বংশে জন্মগ্রহণ করেছে কিংবা কত টাকার মালিক হয়েছে তা বড় কথা নয় বরং সবচেয়ে বড় কথা হলো তার সুন্দর আচরণ। কেননা অনেক ধনী ও বিদ্বান ব্যক্তি আচরণে শিষ্টতার অভাবে মানুষের নিকট সম্মান পায় না। সবাই তাদের এড়িয়ে চলে। অপরদিকে আচরণে পরিশোধিত হলে যেকোনো ব্যক্তি মানুষের নিকট থেকে সম্মান , মর্যাদা ও সহানুভূতি লাভ করে থাকে। ভদ্র ও মার্জিত মানুষের সঙ্গ সবাই কামনা করে। জীবনের সকল ক্ষেত্রে শিষ্টাচারী ব্যক্তি সফলকাম হতে পারে। সামাজিক জীবনে শিষ্টাচার মানুষের জন্যে মহামূল্যবান ও স্বর্গীয় সম্পদ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। মহানবী হযরত মুহম্মদ ( স ) বলেছেন , “ সুন্দর ব্যবহারই সওয়াব। ” একজন শিষ্টাচারী মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে সাফল্য লাভ করা ছাড়াও পরকালে আল্লাহর করুণা লাভে ধন্য হবে।
শিষ্টাচারী হবার উপায়
মানুষের আচরণ তথা স্বভাববৈশিষ্ট্য নির্ধারণে আর্থ - সামাজিক অবস্থা , শিক্ষার পারিবারিক পরিবেশ ও ক্ষেত্রবিশেষে বংশধারা ভূমিকা পালন করে থাকে। তা সত্ত্বেও একজন মানুষ নিজ চেষ্টায় সদাচারী হয়ে উঠতে পারে। যে আচরণ , অভিব্যক্তি বা কথা মানুষ সাদরে গ্রহণ করে , প্রশংসা করে তাকেই জীবনাচারে স্থায়ী করে নেবার সাধনা করতে হবে। সমাজে যারা জনপ্রিয় এবং সদাচারী বলে স্বীকৃত তাদের সাহচর্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে নিজের আচরণগত শুদ্ধতা আনয়ন করা যায়। মহান ব্যক্তিদের জীবনী পাঠ , ধর্মীয় বিধি - বিধানের অনুসরণ , ভালো বন্ধুর সঙ্গ ও পরামর্শ গ্রহণের মধ্য দিয়ে একজন মানুষ শিষ্টাচারী হয়ে উঠতে পারে। শিষ্টাচারী হবার উপকারিতা অপরিসীম কিন্তু একে অর্জন করার জন্য কোনো পয়সা লাগে না , সাধনারও প্রয়োজন হয় না। প্রকৃতপক্ষে সত্য - সুন্দর ও কল্যাণের চেতনাকে নিজের মধ্যে লালন করা এবং বিনয়কে চরিত্র ভূষণ করে তুলতে পারলেই শিষ্টাচারী হওয়া যায়।
উপসংহার
প্রাচীনকালে আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা অনিন্দ্যসুন্দর শিষ্টাচারের অধিকারী ছিল। তাদের নমনীয়তা , সততা , শ্রদ্ধাবোধ প্রভৃতি ছিল প্রশংসনীয়। বর্তমানে পাশ্চাত্য উগ্র সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের সমাজের সেই সৌজন্যবোধটি বিকৃত হয়ে পড়েছে। ছেলেমেয়েদের মধ্যে শিষ্টাচার বা শালীনতাবোধ আজ নেই বললেই চলে। একটি উন্নয়নশীল জাতির জন্য নিশ্চয়ই তা হতাশাব্যঞ্জক। নৈতিক অবক্ষয় থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার মানসে আমাদেরকে অবশ্যই শিষ্টাচার বা মার্জিত আদব - কায়দায় অগ্রসর হতে হবে।
কৌণিক বার্তা.কম কে সাহায্য করোঃ
রচনাটি সম্পূর্ণ করার জন্য কিছু পয়েন্ট প্রয়োজন। আপনি চাইলে কিছু পয়েন্ট দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন। নতুন রচনা লিখে দিতে চাইলে দিতে পারবেন, ধন্যবাদ। |
বাংলা রচনার সম্পূর্ণ তালিকা
সবগুলো অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ ও ঔ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প ফ ব ভ ম য র ল শ ষ স হ ড় ঢ় #
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।
আপনার মূল মান মতামতটি আমাদের জানান। আমি শালীন ভাষা ব্যাবহার করবো এবং অশ্লীল ভাষা ব্যাবহার থেকে বিরত থাকবো। কৌণিক বার্তা.কম আপনার আইপি অ্যাড্রেস ব্লকের ক্ষমতা রাখে।
comment url