রচনাঃ সৎসঙ্গ বা সৎসঙ্গের গুরুত্ব সকল শ্রেণির জন্য (JSC SSC HSC 6 7 8 9 10 class)

“সঙ্গসুখ ছাড়া মানুষের জীবন এক মুহূর্তও চলতে পারে না। তাই সৎসঙ্গ সকল মানুষের জীবনে প্রয়োজন। সৎসঙ্গ রচনা সকল শ্রেণির জন্য দেওয়া হলো এসএসসি, এইচএসসি, জেডিএস, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম শ্রেণিন জন্য সহজ ভাবে লেখা হয়েছে। ”

রচনা সৎসঙ্গ  অথবা , সৎসঙ্গের গুরুত্ব

সৎসঙ্গ অথবা , সৎসঙ্গের গুরুত্ব

ভূমিকা

মানুষ সামাজিক জীবই শুধু নয়,সে জন্মগতভাবেই সঙ্গপ্রিয়। সঙ্গসুখ ছাড়া মানুষের জীবন এক মুহূর্তও চলতে পারে না। সঙ্গীর কামনা মানুষের চিরন্তন প্রবৃত্তি। তাই তো সৃষ্টির আদি থেকেই মানুষ সঙ্গী - সাথী নিয়ে জীবন সাজিয়েছে। তবে সঙ্গী নির্বাচনে ভুল হলে মানুষের জীবন নানা বিড়ম্বনায় বিষিয়ে উঠতে পারে। 

সৎসঙ্গের স্বরূপ

মানুষের সঙ্গী চাই , বন্ধু চাই , কিন্তু সব মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব কাম্য হতে পারে না। মানুষ সহজেই অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। তাই সঙ্গীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সহজেই মানুষকে সুপথ বা কুপথে নিতে পারে। সঙ্গ প্রভাবের কথা মনে রেখে সৎ ও নিঃস্বার্থ ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে সালাভ করা যায়।

সৎসঙ্গের গুরুত্ব

শেখ সাদীর একটি কবিতায় সৎসঙ্গের গুরুত্ব সম্পর্কে উপদেশ পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে , এক ব্যক্তি একখণ্ড মাটির ঢেলায় মনোরম সৌরভ মিশে আছে দেখে বিস্মিত হন। মাটির খণ্ডটি বিস্মিত লোকটিকে জানায় , সৌরভ ছড়ানোর ক্ষমতা তার নেই। সে নিতান্তই একখণ্ড মাটি ছাড়া অন্য কিছু নয়। আসলে সে এক গোলাপ শাখার তলে দীর্ঘদিন পড়েছিল। ফুলের সুরভি তার শরীরে মিশে আছে। তার সৌরভস্নাত হওয়ার রহস্য লুকিয়ে আছে সঙ্গলাভের সুযোগের মধ্যে। শেখ সাদী তাঁর গুলিস্তাঁ কাব্যে এ উপদেশটি শুনিয়েছেন এভাবে “ হে সুগন্ধী মৃরূপী কহ ত বিবরি তুমি কি অম্বার মণি অথবা কতুরী। নাহিক অম্বার আমি , নই কস্তুরিকা গোলাপের মূলে ছিনু — আমি যে মৃত্তিকা। “সামাজিক জীবনে একজন মানুষ সঙ্গ প্রভাবে যেমন অতুলনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে পারে , তেমনি হতে পারে দুশ্চরিত্র , দুর্বৃত্ত। অনেক প্রতিভাবান ও মনোরম চরিত্রের মানুষকেও দেখা গেছে অসৎ সঙ্গের প্রভাবে অধঃপতনের গভীরে তলিয়ে যেতে। আবার অনেক অবঃপতিত ব্যক্তিকেও সচ্চরিত্র মানুষের সঙ্গলাভের মাধ্যমে সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে দেখা যায়।

সঙ্গী নির্বাচনে সতর্কতা

সমাজে নানা শ্রেণির মানুষের বসবাস। ঠক , প্রতারক ও বিপথগামী মানুষের অভাব নেই আমাদের সমাজে। আবার কিছু মানুষ রয়েছে অন্ধকার আকাশে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মতো। সঙ্গী বা বন্ধু হিসেবে এই উজ্জ্বল আলোকিত মানুষদেরই কামনা করতে হবে। দুষ্ট লোকেরা সাধারণত মিষ্টি কথায় মন গলাতে চায়। তারা বন্ধুত্বের ছদ্মাবরণে আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করতে ব্যস্ত। তাই এসব লোকের সংস্পর্শ সজ্ঞানে পরিহার করতে হবে। প্রয়োজনে ' একলা চলো ' নীতি গ্রহণ করতে হবে তবুও দুষ্ট লোকের কাছে যাওয়া উচিত হবে না। কথায় আছে ‘দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য’। কাজেই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে তার বাইরের রূপ বা জ্ঞানগরিমা দেখে মুগ্ধ হলে চলবে না। দেখতে হবে তার মধ্যে সততা আছে কি না , তার মনের জগৎ টি আলোকিত কি না। দার্শনিক ইমাম গায্যালী সৎবন্ধর কতকগুলো গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করেছেন। তিনি অসৎ , স্বার্থপর ও ধর্মহীন মানুষের সঙ্গ থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। মহানবী হযরত মুহম্মদ ( স ) বলেছেন , “ কুসংসর্গে বাস করার চেয়ে একা বসে থাকা ভালো এবং একাকী বসে থাকা অপেক্ষা সৎসঙ্গে থাকা ভালো , অসৎ বাক্যালাপের চেয়ে চুপ থাকা ভালো এবং চুপ করে থাকার চেয়ে বিদ্যান্নেখীর সঙ্গে বাক্যালাপ করা ভালো।”

ছাত্রজীবনে সৎসঙ্গের গুরুত্ব

ছাত্রজীবন মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। বয়সগত কারণে এ বয়সে মানুষের সা কামনা সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়। অভিজ্ঞতা ও বাস্তব জ্ঞানের অভাবে এ বয়সে বন্ধুর দ্বারা মানুষ প্রভাবিত হয় সহজেই। তাই এ বয়সে সৎসঙ্গের প্রয়োজন জরুরি। অনেক তরুণ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে দুষ্কর্মে জড়িয়ে পড়ে। পরিণামে নিজের জীবন ও পরিবারকে নিয়ে যায় ধ্বংসের দিকে। আজকাল ছাত্র ও তরুণ সমাজের মধ্যে মাদকদ্রব্যের নেশা , সন্ত্রাস ও অসামাজিক কার্যকলাপের যে প্রবণতা লক্ষ করা যায় , তার জন্যে তাদের সঙ্গদোষই অনেকাংশে দায়ী। তাই ছাত্রদের নিজেদের যেমন সঙ্গী নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে , তেমনি অভিভাবকদেরও লক্ষ রাখতে হবে যে তাদের সন্তান কার সাথে মেলামেশা করে। সঙ্গদোষে যাতে বিপথগামী না হয় সেজন্যে সন্তানদের সচেতন করে তোলা অভিভাবক ও শিক্ষকদের দায়িত্ব। যেসব ছাত্র পড়শোনায় অমনোযোগী , মাদকাসক্ত বা সন্ত্রাসের সাথে জড়িত তাদের সাথে কিছুতেই মেলামেশা করা উচিত হবে না। ছাত্রদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে— “ সৎসঙ্গে স্বর্গবাস কাজেই ছাত্রদের জীবনে কোনো সর্বনাশ যাতে ঘনিয়ে না আসে সেজন্যে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। তাদের মনে রাখতে হবে তারাই আগামী দিনে জাতির কর্ণধার। তাদের ধ্বংস মানে জাতির ভবিষ্যৎই ধ্বংস।

উপসংহার

মহামানবদের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে , তাদের মঙ্গল চেতনা দ্বারা অন্যদের প্রভাবিত করেছেন। নিজের আলোয় অন্যদের আলোকিত করেছেন। সেজন্যে তাদের সঙ্গলাভে মানুষ ছিল উন্মুখ। তারা ছিলেন মানুষের প্রকৃত বন্ধু। কোনো স্বার্থ , লোভ বা প্রত্যাশায় মানুষকে কাছে টেনে নেন নি। আমাদের কারও সঙ্গলাভের আগেই তার মতলব ও চরিত্র সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। যদি সৎসঙ্গ না - ই পাওয়া যায় , তাহলে একাকীত্বকে বরণ করে নিতে আমাদের দ্বিধা থাকা উচিত নয়।

কৌণিক বার্তা.কম কে সাহায্য করোঃ
রচনাটি সম্পূর্ণ করার জন্য কিছু পয়েন্ট প্রয়োজন। আপনি চাইলে কিছু পয়েন্ট দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন। নতুন রচনা লিখে দিতে চাইলে দিতে পারবেন, ধন্যবাদ।


বাংলা রচনার সম্পূর্ণ তালিকা


আপনি পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করতে পারবেন 200 সেকেন্ড পর


বাংলা প্রবন্ধ রচনা তালিকা


সবগুলো #

এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।

Next Post Previous Post
মন্তব্যগুলো দেখান
মন্তব্যগুলো যোগ করুণ

আপনার মূল মান মতামতটি আমাদের জানান। আমি শালীন ভাষা ব্যাবহার করবো এবং অশ্লীল ভাষা ব্যাবহার থেকে বিরত থাকবো। কৌণিক বার্তা.কম আপনার আইপি অ্যাড্রেস ব্লকের ক্ষমতা রাখে।

comment url