সময়ের মূল্য রচনা | অথবা, সময়ানুবর্তিতা অথবা, সময়ের সদ্ব্যবহার রচনার পিডিএফ ডাউনলোড SSC HSC JSC
রচনাঃ সময়ের মূল্য |
ভূমিকা
ইংরেজিতে একটা কথা আছে, Man does not live in years but in deeds– মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে; বয়সের মধ্যে নয়। বিশ্বজগতে অনন্ত কালপ্রবাহে মানুষের জীবন নিতান্তই ক্ষণস্থায়ী। এ ক্ষণস্থায়ী জীবনও মহামহিম হয়ে উঠতে পারে মানুষের মহৎ কর্মে ও অবদানে। আর এজন্য অমূল্য সময়ের যথাযথ ব্যবহার করা প্রয়োজন। মানুষের ধন - সম্পদ,মান - সম্মান , স্বাস্থ্য ইত্যাদি হারিয়ে গেলে স্বীয় চেষ্টায় হয়ত তা ফিরে পাওয়া যায় , কিন্তু সময় একবার চলে গেলে আর ফিরে আসে না। এর মূল্য অন্য কোনো জিনিস দিয়ে পরিমাপ বা বিনিময় করা যায় না । সুতরাং , আমাদের জীবনের এই অমূল্য সম্পদ সময়কে অবহেলা করে নষ্ট করা উচিত নয়। আমাদের সময়ের মূল দিতে হবে।
সময়ের সদ্ব্যবহার
সময় অনন্ত, কিন্তু সীমাবদ্ধ মানুষের আয়ুষ্কাল। কাজেই প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথ কাজে লাগিয়ে ক্ষণস্থায়ী জীবনকে সুন্দর করে তোলা সচেতন মানুষের কাজ । জীবনে উন্নতি সাধনের জন্য প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো অপরিহার্য। সময়ের সদ্ব্যবহার বলতে সর্বক্ষণ কেবল কাজে নিমগ্ন থাকাই বুঝায় না। কাজের সময় কাজ , বিশ্রামের সময় বিশ্রাম এবং খেলার সময় খেলা, এটাই সময়ানুবর্তিতা–Work while you work and play while you play পরে করা হবে বলে অযথা সময়ের অপচয় করা উচিত নয়। কারণ দীর্ঘসূত্রিতা হরণ করে সময়কে। নির্ধারিত সময়ের কাজ যথারীতি সম্পন্ন করলেই ক্রমশ সময়ের সদ্ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে ওঠে। সময়কে সর্বদা সৃষ্টিশীল কাজে লাগানো উচিত। কারণ কথায় বলে— “সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়”। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর সমৃদ্ধির মূলে রয়েছে সময়ের প্রতি তাদের সচেতনতা ও সময়ের সদ্ব্যবহার করার প্রবল আগ্রহ।
ছাত্রজীবনে সময়ের মূল্য
ছাত্রজীবনকে বলা যায় জীবন সংগ্রামের প্রস্তুতির সময়। এ সময়ে যেমন বীজ বপন করা হয়, ভবিষ্যতে তেমন ফলই পাওয়া যায়। অধ্যয়নই ছাত্রদের প্রধান কর্তব্য। প্রতিদিনের পড়া পরবর্তী দিনের জন্য ফেলে না রেখে যথাসময়ে শেষ করার মানসিকতা থাকতে হবে। নিয়মিত পাঠাভ্যাসের পাশাপাশি শরীরচর্চা , চরিত্র গঠন , শৃঙ্খলা ও সংযমের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কর্মজীবনে সাফল্য নির্ভর করে ছাত্রজীবনে সময়ের সঠিক মূল্যায়নের ওপর। সুতরাং ,শৈশব থেকেই কাজের প্রকৃতি অনুসারে সময়ানুবর্তী হওয়া একান্ত প্রয়োজন। ছাত্রজীবনের দৈনন্দিন কর্মসূচিকে যারা অবহেলা করে তারাই জীবনে সাফল্যের সোনার কাঠির পরশ থেকে বঞ্চিত হয়। এ প্রসঙ্গে উইলিয়াম শেক্সপীয়র বলেছেন- “সময়ের প্রতি যাদের শ্রদ্ধা নেই, তারাই পৃথিবীতে নিঃম , বঞ্ছিত ও পরমুখাপেক্ষী।”
সময়ানুবর্তিতার অন্তরায়
অধৈর্য আর আলস্যই সময়ের যথার্থ ব্যবহারের প্রধান অন্তরায় । কথায় আছে— “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।” কর্মক্ষমতা হরণ করে মনে কুচিন্তার অনুপ্রবেশ ঘটানো অলস মস্তিষ্কের কাজ। সুতরাং, আলস্যকে সযত্নে পরিহার করে স্ব - স্ব আবশ্যকীয় কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে প্রাণবন্ত করে তোলা উচিত। এ প্রসঙ্গে মহামতি এডিসন যথার্থ বলেছেন “ জীবনকে যদি উপভোগ করতে চাও , তবে আলস্যকে দূরে রাখ।" রোগ - ব্যাধি - জরা সময়ানুবর্তী হওয়ার পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে ; কিন্তু যথাযথ শিক্ষা ও সাধনার মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে পারার মধ্যেই সার্থকতা।
সময়কে কাজে লাগানোর উপায়
কেবল নিজে খেয়ে পরে বেঁচে থাকাই মানবজীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। মানুষের গুণগত উন্নতির জন্য যেমন অন্যের কথা ভাবতে হবে , তেমনি আত্ত্বিক বিকাশের জন্য সৃজনশীলতার চর্চা করা আবশ্যক। সময়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে জগতে কীর্তিমান হওয়া সম্ভব। এজন্য সম্মুখে আসা কর্তব্য ও দায়িত্বকে ভাগ করে নিতে হবে। উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী কর্তব্য পালনের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। একদিনের কাজ অন্য দিনের জন্য ফেলে রাখা চলবে না। তাছাড়া কাজের সময়ের মতো অবসর সময়ও চিহ্নিত করে রাখতে হবে।
সময়ানুবর্তিতার গুরুত্ব
মানবজীবন ক্ষণস্থায়ী , কিন্তু তার গৌরব চিরস্থায়ী। জীবনের শিক্ষা অফুরন্ত , কর্তব্য অপরিমেয় , কর্মজগতের পরিধি ক্রমবর্ধমান। তাই সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে কর্মের সঙ্গতি বিধান করা উচিত। যথাসময়ে বীজ বপনের উপর যেমন নির্ভর করে শস্য উৎপাদন , রোগের কারণে উপযুক্ত সময়ে যেমন গ্রহণ করতে হয় ঔষধ , তেমনি সঠিক দায়িত্বের সঙ্গে নিয়মিত পাঠাভ্যাসের মাধ্যমে পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করা সম্ভব। জীবন , প্রকৃতি , পরিবেশ সর্বত্রই সময়ের নিবিড় ছকে পরিচালিত হচ্ছে। সময় ও সুযোগকে কাজে লাগাতে পারলে উন্নতির পথ প্রশস্ত হয় , জগতে কীর্তিমান হওয়ার সুযোগ ঘটে। কবি বলেন— “ সময়ের মূল্য বুঝে করে যারা কাজ তাঁরা আজ স্মরণীয় জগতের মাঝ।”
সময়নিষ্ঠ ব্যক্তির উদাহরণ
যারা সংকল্পে অটল, জীবন যাদের প্রতিশ্রুতাবদ্ধ এবং সময়ের সদ্ব্যবহারে যারা কার্পণ্য করে না, তাদের কাছে অসাধ্য কিছুই নেই। একমাত্র সময়ানুবর্তিতার গুণেই মানুষ নিজের জীবনকে সুষমামণ্ডিত করে দেশ ও জাতির নিকট স্মরণীয় বরণীয় হয়ে উঠতে পারে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীদের জীবন ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় , তাঁরা কেউ সময়ের মূল্য সম্বন্ধে উদাসীন ছিলেন না। তাঁদের প্রতিটি মুহূর্তই ছিল ব্যস্ত ও কর্মবহুল। আব্রাহাম লিংকন , বঙ্গবন্ধু , শেরে বাংলা , লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি , জয়নুল , কামরুল হাসান , গ্যালিলিও , নিউটন , আইনস্টাইন প্রমুখ ব্যক্তি শিল্প - সাহিত্য - বিজ্ঞান - রাজনীতির ভুবনে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন সময়ানুবর্তিতার কারণে।
উপসংহার
ইংরেজিতে বলা হয়, “Time is money” – অর্থাৎ সময়ই অর্থ। সীমাবদ্ধ জীবনে উন্নতির সোপান হলো সময়ের মূল্য অনুধাবন করা। সময়ের সার্থক ব্যবহার জীবনকে করে মহিমান্বিত। মানুষের চরম ও পরম পাওয়ার মূলে রয়েছে সময়ের প্রতি সচেতনতা আর সময়ের সঠিক মূল্যায়ন। সফল ব্যক্তিদের সাফল্যের চাবিকাঠি এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে। সুতরাং জীবনকে অর্থবহ করতে , দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করে তুলতে আমাদের প্রত্যেকেরই সময়ের মূল্য অনুধাবন করা উচিত। তাই আমাদের সময়ের মূল্য দিতে আমরা সময়ের কাজ সময়ে করলে সময়ের মূল্য দেওয়া হবে।
কৌণিক বার্তা.কম কে সাহায্য করোঃ
রচনাটি সম্পূর্ণ করার জন্য কিছু পয়েন্ট প্রয়োজন। আপনি চাইলে কিছু পয়েন্ট দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন। নতুন রচনা লিখে দিতে চাইলে দিতে পারবেন, ধন্যবাদ। |
বাংলা রচনার সম্পূর্ণ তালিকা
সবগুলো অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ ও ঔ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প ফ ব ভ ম য র ল শ ষ স হ ড় ঢ় #
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।
https://allbanglanewspaperlive.com/