ভাবসম্প্রসারণ : এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি | SSC HSC JSC
পৃথিবীতে সম্পদশালীর সম্পদের প্রতি তৃষ্ণা দুর্নিবার ও অসীম। তাদের চির অতৃপ্ত এ তৃষ্ণাকে চরিতার্থ করার প্রয়াসে তারা ক্রমশ অনাহার নিরন্ন মানুষের ন্যূনতম সম্পদটুকুর প্রতিও ভয়াল থাবা প্রসারিত করতে কুণ্ঠিত হয় না। “এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি” - ভাবসম্প্রাসরণ
এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি
এই ভাবসম্প্রসারণটি সকলো শ্রেণীর জন্য উপযোগী | SSC HSC JSC
মূলভাব:
পৃথিবীতে সম্পদশালীর সম্পদের প্রতি তৃষ্ণা দুর্নিবার ও অসীম। তাদের চির অতৃপ্ত এ তৃষ্ণাকে চরিতার্থ করার প্রয়াসে তারা ক্রমশ অনাহার নিরন্ন মানুষের ন্যূনতম সম্পদটুকুর প্রতিও ভয়াল থাবা প্রসারিত করতে কুণ্ঠিত হয় না।
সম্প্রসারিত ভাব:
আমাদের এ পৃথিবীতে বিচিত্র শ্রেণির মানুষের বাস। কেউ ধনী, কেউ দরিদ্র, কেউ রাজা, আবার কেউবা কাঙাল। সকলের অবস্থা ঠিক সমান নয়। এই অসমান অবস্থার জন্য কারো ঘরে ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য, আতশবাজি খেলা, আবার কারো ঘরে অন্ধকারেও দীপ জ্বলে না। এ অবস্থার পরিবর্তন কখনো হবে কিনা তা আমরা জানি না। কিন্তু এই বৈষম্য একটি নিষ্ঠুর জাগতিক সত্য। তবে আমরা আশা করে থাকি, যারা ধনী, যাদের প্রচুর আছে, তারা দরিদ্রদের জন্য কিছু ত্যাগ করবেন। গরিব লোকেরা ধনীদের করুণা পাবে। কিন্তু বাস্তবে যা দেখা যায় তা একেবারে বিপরীত পৃথিবীতে যারা প্রচুর সম্পদের মালিক, যাদের প্রচুর আছে, তাদের সম্পদ তৃষ্ণা কোনোদিন পরিতৃপ্ত হয় না। তারা যত পায়, তত চায়। এভাবে তারা নিজেদের আরও বেশি সম্পদশালী করে তোলে। তাদের নির্বিচারে সম্পদ সংগ্রহের ফলে গরিবের সম্পদে হাত পড়ে। পৃথিবীর দুঃখী মানুষেরা তাদের সামান্য পুঁজি নিয়ে জীবনযাপন করে। ধনিকের ঐশ্বর্যের প্রতি একদিন পরিবের কুটিরকে স্পর্শ করে। নানা ছলে নানা কৌশলে কিংবা বল প্রয়োগ করে দরিদ্রের সর্বশেষ সম্বলটুকু ছিনিয়ে এনে ধনীরা নিজেদের সম্পদষ্ণার আগুনে আত্মাহুতি দেয়। এভাবে পৃথিবীর দরিদ্রেরা তাদের সবকিছু হারিয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে সাজে পথের ভিক্ষুক, অনের কাঙাল। কেউ তাদের হিসাব রাখে না, কেউ তাদের খবর রাখে না। অথচ এরা বিত্তবানের নির্মম বিলাসিতার শিকার।
মন্তব্য:
শোষণভিত্তিক পুঁজিবাদী এ সমাজব্যবস্থায় পুঁজিপতি বিত্তশালী মানুষ পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে গ্রাস করছে অনাহারে নিপীড়িত দরিদ্র মানুষের ন্যূনতম সম্পদ। বিত্তবানদের এ অতৃপ্ত সর্বগ্রাসী প্রক্রিয়াকে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করতে হবে।
বিভিন্ন বই এবং অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে
এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
মূলভাব : অর্থশালী ও সম্পদশালী ব্যক্তিরা যে কোনো পন্থায় বা কৌশলে আরও অর্থ-বিত্তের মালিক হতে চায়। তাদের অর্থ লাভের চাহিদা এবং সম্পদ লাভের আকাঙ্ক্ষার যেন শেষ নেই।
সম্প্রসারিত ভাব : জীবন সমস্যাসঙ্কুল ও সংকটময়। বেঁচে থাকার জন্যে মানুষকে সেই সমস্যা ও সংকটের মোকাবেলা করতে হয়। প্রয়োজনীয় অর্থ-সম্পদ ছাড়া এ সব সমস্যা ও সংকটের মোবাবেলা করা সম্ভব নয়। এজন্যে প্রত্যেকেরই অর্থ-বিত্তের দরকার আছে, যা দিয়ে তারা তাদের অভাব ও চাহিদা মিটাবে। কিন্তু সব মানুষই সমান অর্থ-বিত্তের মালিক নয়। সমাজে কেউ বিপুল অর্থ-সম্পদের অধিকারী, আবার কারো কোনো অর্থ-বিত্তই নেই। পার্থিব জীবনে এই সামাজিক ভেদাভেদ শারীরিক শক্তি, ক্ষমতা ও প্রভাবের পার্থক্যের কারণেই হয়েছে। যে কারণে কেউ ধনী, কেউ গরিব, কেউ সম্পদশালী, কেউ নিঃস্ব। বেঁচে থাকার সামান্য অবলম্বনটুকুও অনেকের নেই। সমাজে তারাই দুর্বল, অসহায়, দরিদ্র এবং অবহেলিত। ধনী ও বিত্তবান ব্যক্তিরা এসব দরিদ্র, দুর্বল মানুষকে কৌশলে ঠকিয়ে, বল প্রয়োগ করে অথবা প্রভাবিত করে শোষণ করে। প্রতারণা ও বাঞ্চনার মাধ্যমে দরিদ্রদের অর্থ-সম্পদ কুক্ষিগত করে ধনীরা অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। তারপরও অর্থ-বিত্তের প্রতি তাদের লোভের শেষ নেই। তাদের আকাঙ্ক্ষা অসীম, অভাব সীমাহীন আর চাহিদা বেপরোয়া। তাদের মনের ক্ষুধার নিবৃত্তি নেই। এ প্রকৃতির মানুষের সারাক্ষণের চিন্তা চাই-চাই-আরও চাই। যাদের অনেক আছে তারাই আরও বেশি চায়। আর এ চাওয়াকে পাওয়ায় পরিণত করত জুলুম-অত্যাচার, ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। অক্টোপাশের মত চারদিকে ঘিরে ধরে দরিদ্র মানুষের শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নিতে তারা কিছুমাত্র দ্বিধা করে না। একটু মায়া-মমতা, একটু সহানুভূতি, একটু বিবেচনাবোধ শোষিতের জন্যে অবশিষ্ট থাকে না। কৃষিজীবী ও শ্রমজীবীরা যেন তাদের কাছে পণ্যের মতো, ভোগ করে উচ্ছিষ্টটুকু ফেলে দেয়। সম্পদ বাড়ানোর এমন দুর্দমনীয় নেশা কার্যকর করতে সত্য-মিথ্যা, ভালোমন্দ ইত্যাদি বিষয়কে দূরে ঠেলে বিত্ত ও বৈভবের মোহে তারা দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলে।
অনাহারক্লিষ্ট দরিদ্র মানুষ নিত্যদিন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের শিকার। তারা কষ্ট করে। দুঃখে তাদের জীবন গড়া। কিন্তু তারপরও ধনীদের বিত্ত-বৈভবের দিকে তারা লোভী দৃষ্টিতে তাকায় না। ’রাজা, জমিদার, মহাজনদের বিলাসবহুল জীবনের খোঁজ-খবর রাখে না। ভাঙা কুটিরে একবেলা আধপেটা খেয়ে হাসি-আনন্দে কাটিয়ে দেয় অসহায় মানুষ। অসৎ, অনৈতিক, অমানবিক কাজকর্মকে তারা ঘৃণা করে। কোনোরকমে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার মধ্যেই তাদের সুখ এবং শান্তি। অথচ এই নিরিবিলি অভাব-অনটনের শান্তিতেও বাধা সৃষ্টি করে ধনিক শ্রেণী। তাদের লোভী দৃষ্টি গ্রাস করে গরিবের ভিটে মাটি, সামান্য জমিজিরাত। এভাবেই ‘রাজার হস্ত’ অর্থাৎ বিত্তশালীরা ’করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’। কৌশলে চুরি করে, শোষণ করেই যাদের ভুরি ভুরি আছে তারা আরও ধনী হয়।
সারা পৃথিবী দুঃখী মানুষের আহাজারি আর দীর্ঘনিঃশ্বাসে ভরে উঠেছে। শ্রেণীবিভক্ত সমাজ ব্যবস্থায় নির্মম শিকার হয়ে শোষিত-বঞ্চিত মানুষ শুধুই কাঁদে আর অভিশাপ দেয়। কিন্তু আর কতদিন? কতদিন ধনী আরও ধনী হবে, গরিব ক্রমশ নিঃস্ব হতে থাকবে? পেশীশক্তি আর এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শিকড় উপড়ে ফেলার সময় এখনই। মানুষে মানুষে অর্থনৈতিক সমতা বিধানের সুযোগ সৃষ্টি করা ধনীদেরই নৈতিক দায়িত্ব।
বিঃদ্রঃ বাংলাদেশর সকল শিক্ষা বিষয়ের খবর তথ্য জানতে চোখ রাখুন কৌণিক বার্তা ফেসবুক পেজেঃ-
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।
আপনার মূল মান মতামতটি আমাদের জানান। আমি শালীন ভাষা ব্যাবহার করবো এবং অশ্লীল ভাষা ব্যাবহার থেকে বিরত থাকবো। কৌণিক বার্তা.কম আপনার আইপি অ্যাড্রেস ব্লকের ক্ষমতা রাখে।
comment url