বাংলা রচনাঃ বৃক্ষরোপণ | পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষরোপণ অভিযান
বৃক্ষরোপণ |
পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষরোপণ অভিযান
বাংলা রচনাঃ বৃক্ষরোপণ অভিযান পয়েন্ট | বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি রচনা | বনায়ন কর্মসূচি | পরিবেশ উন্নয়নে বৃক্ষরোপণ রচনা | পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষরোপণ অভিযান | গাছ লাগানো কর্মসূচি ১৫ পয়েন্ট| পরিবেশ সংরক্ষণে গাছ লাগানো রচনা | Brkkharopn Ovijan | poribesh songrokkhon brkkharopn rochona
বিষয়ঃ এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষার | JSC SSC HSC Class 4 5 6 7 8 9 10
ভূমিকা
আমাদের এ পৃথিবীর পরিবেশ সংরক্ষণে অরণ্য বা বনায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর বনায়নের মূল উপাধানই হবে বৃ মানুষ ও প্রকৃতির অকৃত্রিম বন্ধু। বৃক্ষ মানুষকে নানা ধরনের উপকার করে থাকে। বৃক্ষের পাতা, ফল-মূল, কাঠ সবকিছুই প্রয়োজন মিটিয়ে আসছে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে যে অক্সিজেনের প্রয়োজন তা মূলত বৃক্ষই সরবরাহ করে থাকে। অপরদিকে মানুষের ত্যাগ করা ক্ষতিকর কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে প্রাণিকূলকে বাঁচিয়ে রাখে।
বাংলাদেশে বনের অবস্থা
যেকোনো দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যে মোট ভূমির শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। অনেক দেশে এর চেয়েও বেশি বনভূমি রয়েছে। বাংলাদেশে শতকরা ১২ থেকে ১৪ ভাগ বনভূমি রয়েছে। ভারতে শতকরা ২২ ভাগ, যুক্তরাষ্ট্রে ৩৪ ভাগ, মায়ানমারে ৬৭ ভাগ, জাপানে ৬৩ ভাগ, সুইডেনে ৫৫ ভাগ, কানাড়ায় ৪৫ ভাগ, রাশিয়ায় ৫১ জাগ বনভূমি আছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ খুবই নগণ্য। বাংলাদেশের বনাঞ্চলের মধ্যে টাঙ্গাইল জেলার সমুপুরের গড়, গাজীপুর জেলার ভাওয়ালের গড়, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সিলেট জেলার বনাঞ্চল ও খুলনার সুন্দরবন অঞ্চল উল্লেখযোগ্য। এসব বনাঞ্চলসহ সারাদেশে যেসব ছোটখাটো বনাঞ্চল রয়েছে তা কোনোভাবেই দেশের প্রয়োজন মেটাতে পরছে না। তাছাড়া নিব বৃক্ষনিধন করায় দ্রুত সারাদেশ বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ অভিযান
বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে ১৩ জুন 'বৃক্ষরোপণ অভিযান সরকারি কর্মসূচি হিসেবে পালিত হচ্ছে। এছাড়া "গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান' কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে চায়া বিক্রয় ও বিতরণের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও বনায়ন শুরু হয়েছে। বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য সাড়া জাগিয়েছে। সাময়িক বনায়নের আওতায় সরকারি সিদ্ধান্তে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বৃক্ষরোপণের অনুমতি দেওয়া হয় এবং বৃক্ষ বড় হলে তার ফল ও বৃক্ষ বিক্রি কুরে প্রাপ্ত অর্থের নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লিখিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার বিধান রয়েছে। বেশকিছু উদ্যোগী লোক বিভিন্ন রাসতা, সেচ প্রকল্পের খাল ও বিভিন্ন পরিত্যক্ত জায়গার বৃক্ষরোপণ শুর করেছে। লায়ন্স, রোটারি ও লিও ক্লাবসহ অন্যান্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বৃক্ষরোপণ অভিযানে সহায়তা দিচ্ছে। বর্তমানে বৃক্ষরোপণে উল্লেখযোগ্য সামাজিক সচেতনতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
বৃক্ষরোপণ অভিযানের সুফল
বাংলাদেশে বৃক্ষরোপণ অভিযানের গুরুত্ব অপরিসীম। বৃক্ষরোপণ অভিযানের মাধ্যমে বৃক্ষের উপকারিয়া এ তা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে গণসচেতনতা গড়ে উঠেছে। কিন্তু সরকারই বনজ সম্পদ সৃষ্টির একমাত্র উলে নয়। এক্ষেত্রে জনগণকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আনতে হবে। সরকারিভাবে বাংলাদেশে বৃক্ষরোপণ অভিযান শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকে। বৃক্ষরোপণে মানুষকে সচেতন করা ও বৃক্ষের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে দেশব্যাপী জেলা ও যানা সদরে বৃক্ষমেলা অনুষ্ঠিত হয়। বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার জন্যে সবাইকে অনুপ্রাণিত করতে সরকার 'বৃক্ষরোপণে প্রমানম পুরস্কার" প্রবর্তন করেছে। এতে প্রতিবছর ৯টি করে ২৭টি পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাংলাদেশে সরকারি নার্সারির পাশাপাশি ৫ হাজার ৫শটি বেসরকারি নার্সারি গড়ে উঠেছে।
বৃক্ষনিধন ও তার কারণ
বাংলাদেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম। এই সামান্য বৃক্ষ সম্পদও টিভিতে গ্রা না। ক্রমবর্ধমান বৃক্ষনিধন পরিবেশ বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে বৃক্ষনিধনের কারণ হলো অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে হচ্ছে। অতিরিক্ত আবাদি জমি সৃষ্টির জন্য নির্বিচারে বনভূমি সাফ করে ফেলা হচ্ছে। বর্ধিত মানুষের আসবাবপত্র ও জ্বালানি সংগ্রহের জন্যেও গাছ কাটতে হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও দিন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সাথে বাড়ছে মানুষের মৌলিক চাহিদা। আবাসিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ভবনসহ অবকাঠামো নির্মাণের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর অন্যতম কাঁচামাল ইট তৈরিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে বৃক্ষ। স্বাধীনতা উত্তরকালে ইটভাটাতেই দেশের প্রায় অর্ধেক বনজ সম্পদ নিঃশেষ করা হয়েছে। বাংলাদেশে পল্লি অঞ্চলের মানুষ অভাবের তাড়নায় ছোট ছোট ফলজ বৃক্ষকেও কেটে ফেলছে। তাছাড়া মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞান ও সচেতনতা না থাকার জন্যেও বৃক্ষনিধন বাড়ছে। বিশাল পরিমাণের বৃক্ষ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বৃক্ষনিধনের পরিণতি
আমরা ক্রমশ একটি অনিবার্য ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছি। নির্বিচারে বনভূমি বা বৃক্ষরাজি নিধনের ফলে সুজলা-সুফলা বাংলাদেশ পরিবেশ দূষণের শিকারে পরিণত হচ্ছে। যড়ঋতুর লীলা-নিকেতন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। পক্ষান্তরে আকস্মিক বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ে প্রতিবছর বাংলাদেশ হচ্ছে বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত। জলবায়ু ক্রমশ এগিয়ে চলেছে চরমভাবাপন্ন পরিণতির দিকে। অতি নিকট ভবিষ্যতেই বাংলাদেশ ঊষর মরুতে পরিণত হতে চলেছে। অছাড়া বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড বৃদ্ধি পাচ্ছে, বাড়ছে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা।
বৃক্ষ রক্ষায় করণীয়
জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করতে হবে, যাতে প্রকৃতির উপর অতিরিক্ত জনগোষ্ঠীর চাহিদার চাপ না পড়তে পারে। সেজন্য চোরাই বা দস্যুবৃত্তি বন্ধ করতে হবে। কঠোর আইন প্রয়োগ করে তা করা যেতে পারে। তাছাড়া প্রয়োজনে একটি গাছ কাটলে পরিবর্তে পাঁচটি সে জাতের গাছ অবশ্যই লাগাতে হবে। সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে এই নীতি গ্রহণ করতে হবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বৃক্ষরোপণ অনেক সময় লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র হয়ে থাকে। তা যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণকে গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে হবে ও সারাবছর গাছ লাগাবার প্রবণতা গড়ে তুলতে হবে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে গাছ লাগানো শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের পুরস্কারের মাধ্যমে উৎসাহিত করতে হবে। প্রচার মাধ্যমগুলো বৃক্ষরোপণের অনুষ্ঠান করেও জনগণকে উৎসাহী করে তুলতে পারে।
উপসংহার
গাছ মানুষের পরম বন্ধু। একজন মানুষের পক্ষে অন্তত তিনটি গাছ লাগানো উচিত- একটি ফুলের, একটি ফলের ও একটি ঔষধি। আগামী প্রজন্মকে সুখে-শান্তিতে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের অঙ্গীকার হোক- আর নয় বৃক্ষনিধন, বৃক্ষরোপণ করে ফুলে-ফলে, সবুজে-শ্যামলে ভরে তুলি এ বিশ্বকে। তাহলে বৃক্ষরোপণ অভিযান সফল হবে।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।
আপনার মূল মান মতামতটি আমাদের জানান। আমি শালীন ভাষা ব্যাবহার করবো এবং অশ্লীল ভাষা ব্যাবহার থেকে বিরত থাকবো। কৌণিক বার্তা.কম আপনার আইপি অ্যাড্রেস ব্লকের ক্ষমতা রাখে।
comment url