Daraz Deals Rozar Bazar| দারাজ এ করুন রমজানের বাজার

লাহোর প্রস্তাব পটভূমি, গুরুত্ব, বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য

Advertisement
লাহোর প্রস্তাব পটভূমি, গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য | The Lahore Resolution of 1940

আজ আমার হালোর প্রস্তাব এর ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। লাহোর প্রস্তাব কি এর পটভূমি গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানবো।

লাহোর প্রস্তাব কি

লাহোর প্রস্তাব হচ্ছে, উপমহাদেশের উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলীয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাসমূহের মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্রসমূহ গঠিনের সিদ্ধান্ত। আঞ্চলিক স্বাধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার ও সার্বভৌমত্ব অর্জনই ছিল এ হালোর প্রস্তাবের মূল কথা।

লাহোর প্রস্তাব, ১৯৪০

The Lahore Resolution of 1940 

ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে লাহোর প্রস্তাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি ব্রিটিশ শাসন অবসান কল্পে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে এবং ভারতবর্ষের ১১টি প্রদেশের মধ্যে ৭টিতে কংগ্রেস ক্ষমতাসীন হয়। বাকী ৪টিতে মুসলিম লীগের একক ও কোয়ালিশন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু কংগ্রেসী শাসনের ফলে উপমহাদেশের মুসলমানরা সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত হয়ে পড়ে। কারণ তারা লক্ষ করে যে, কংগ্রেস তাদের দলীয় সংগীত 'বন্দে মাতরম' কে ভারতের জাতীয় সংগীতে পরিণত করে এবং অনেকটা জোরপূর্বক তারা এ কাজটি করে। আর হিন্দিকে তারা ভারতের রাষ্ট্রভাষায় পরিণত করে। তাছাড়া যে সব প্রদেশে কংগ্রেস সরকার গঠন করেছিল সেখানে মুসলমানরা সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত হয়েছিল। তাই কংগ্রেসী শাসনের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরা উপলব্ধি করতে পারে যে, আর যাই হোক কোনো চুক্তি বা সমঝোতার মাধ্যমে ভারতের হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকদের পক্ষে একটি রাষ্ট্রে বসবাস করা সম্ভবপর নয়। তাই ১৯৪০ সালের ২৩শে মার্চ মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলসমূহে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। এটি লাহোর প্রস্তাব (Lahore Resolution) নামে পরিচিত। মুসলিম লীগের সভাপতি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পূর্ববঙ্গের কৃতি সন্তান এ. কে. ফজলুল হক। তিনি জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব পেশ করেন।

লাহোর প্রস্তাবের পটভূমি

(The Background of the Lahore Resolution) উপরের বর্ণনা মতে এটি লক্ষণীয় যে, লাহোর প্রস্তাব পেশের ঘটনা একদিনে সৃষ্টি হয় নি। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে সুদীর্ঘকাল ধরে যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত পরিচালিত হয়েছিল তার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ মুসলিম লীগ কর্তৃক লাহোর প্রস্তাব পেশ করা হয়। যে সকল কারণ ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪০ সালের ২৩শে মার্চ মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল সেগুলো নিম্নরূপ:

নেহেরু রিপোর্টের প্রতিক্রিয়া:

১৯২৮ সালে কংগ্রেস নেতা মতিলাল নেহেরু ও তদীয় পুত্র জওহর লাল নেহেরু কর্তৃক 'নেহেরু রিপোর্ট' প্রকাশিত হয়। এ রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যায় যে এটি শুধুমাত্র হিন্দুদের দাবী-দাওয়া পূরণের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। অপরদিকে এ রিপোর্টে মুসলমানদের স্বার্থ ও দাবি-দাওয়া যথারীতি অস্বীকার করা হয়েছে। নেহেরু রিপোর্টের সুপারিশমালা পুনর্বিবেচনার জন্য কলকাতায় সর্বদলীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। নেহেরু রিপোর্টের ওপর মুসলমানদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মুসলিম লীগের সংশোধনী প্রস্তাব কংগ্রেস অগ্রাহ্য করে। ফলে মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ বুঝতে পারেন যে, হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

গোল টেবিল বৈঠকের ব্যর্থতা:

ভারতের শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৩০-৩২ সালে লন্ডনে পরপর তিনটি গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সম্প্রদায় ও দেশীয় রাজ্যের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। মহাত্রা গান্ধী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক প্রমুখ নেতা গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের একগুয়েমির কারণে আইনসভার প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে গোল টেবিল বৈঠক বার্থ হয়। কারণ কংগ্রেসের প্রতিনিধিরাই কেবল ভারতের জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করে। কংগ্রেস কর্তৃক মুসলিম লীগের ন্যূনতম দাবি মেনে না নেয়ার কারণে কংগ্রেস সম্পর্কে মুসলিম লীগের মনোভাব পরিবর্তন হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মুসলমানরা নিজেদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন। আর এর ফলশ্রুতিতে লাহোর প্রস্তাব প্রণীত হয়।

মুসলিম চিন্তাবিদদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের চিন্তাধারা:

নেহেরু রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। এর ফলে মুসলিম লীগ যেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় তেমনি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রখ্যাত মুসলিম নেতারাও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান। নেহেরু রিপোর্টের সমালোচনা করে ১৯২৮ সালে আগা খান উত্তর-পশ্চিম ভারতে ও পূর্ব ভারতে মুসলমানদের জন্য কয়েকটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করেন। ১৯৩০ সালে মহাকবি আল্লামা ইকবাল পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু প্রদেশ ও বেলুচিস্তানের সমন্বয়ে একটি বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করেন। ১৯৩৩ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র চৌধুরী রহমত আলী উত্তর পশ্চিম ভারতের মুসলমানদের জন্য 'পাকিস্তান' (Pakistan) নামক রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করেন।

১৯৩৭ সালের নির্বাচন: 

ভারতবর্ষে ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের বিপুল বিজয় ঘটে এবং মুসলিম লীগ পরাজিত হয়। কংগ্রেস এককভাবে ৭টি প্রদেশে মন্ত্রিসভা গঠন করে। শুধু বাংলা ও পাঞ্জাবে মুসলিম লীগ কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠন করে। মুসলিম লীগ বিভিন্ন প্রদেশে যুক্তভাবে মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব করলে কংগ্রেস ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে অস্বীকার করে। কংগ্রেস শাসিত প্রদেশগুলোতে অফিস-আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কংগ্রেসী পতাকা উত্তোলন ও 'বন্দে মাতরম' জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার ব্যবস্থা করে, কংগ্রেস রাষ্ট্রভাষা হিসেবে হিন্দি চালু করে। এতে মুসলমানরা বুঝতে পারে যে, কংগ্রেস ভারতবর্ষে হিন্দু রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এসময় ভারতের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধে।

হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রভাব:

১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর কংগ্রেসের সভাপতি পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ঘোষণা করেন যে, ভারত উপমহাদেশে কেবল দুটি দলের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। একটি হচ্ছে কংগ্রেস এবং অপরটি হচ্ছে ব্রিটিশ সরকার এবং অপরাপর সবদলই কংগ্রেসের অন্তর্ভুক্ত। তার এ মন্তব্যে মুসলিম নেতৃবৃন্দ মর্মাহত ও ব্যথিত হন। মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন যে, ভারতীয় মুসলমানগণ ভারত উপমহাদেশে তৃতীয় দল এবং তারা একটি আলাদা জাতি। এরপর জিন্নাহ ঘোষণা করেন, ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমান দুটি পৃথক জাতি। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র দাবি করেন।

লাহোর প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য

উত্তা ও ভূমিকা। আজাদের যে, স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা বসবাস করছি তার পূর্ব ইতিহাস বিবেচনা করলে বলা যায় লাহোর প্রস্তাবই এই স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিল। ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের কারণেই বাঙালি স্বাধীন সার্বভৌম স্বাধীন হয়। এক কথায় যদি বলা হয় এটা বাঙালির জন্য ছিল আশীর্বাদপূর্ণ প্রস্তাব। লাহোর প্রস্তাবের ব্যাখ্যা নিয়ে এক সময় বিভিন্ন জনের ভিন্ন ভিন্ন মত থাকলেও, আজ এটা স্বীকৃত যে, স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ (Independent States) দ্বারা উল্লিখিত দুটি অঞ্চলে বস্তুত দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। সবারই জানা যে, এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হক। তিনি কখনো জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন না। লাহোর প্রস্তাবের কোথাও দ্বি-জাতি তত্ত্বের উল্লেখ নেই। এই প্রস্তাবের কোথাও পাকিস্তান শব্দটিরও উল্লেখ নেই, যদিও তা দ্রুত পাকিস্তান প্রস্তাব হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। উপমহাদেশের আন্তঃরাজনৈতিক অবস্থা তথা ব্রিটিশ শোষণ থেকে এ উপমহাদেশের মুক্তি এবং উপমহাদেশে বিভাজন নীতিই ছিল লাহোর প্রস্তাবের মূখ্য উদ্দেশ্য। এর অন্যান্য উদ্দেশ্যগুলো হলো-

১. মুসলমানদের স্বার্থরক্ষার নিমিত্তে লাহোর প্রস্তাব পেশ করা হয়।

২. বঙ্গদেশের সঠিক ভূ-সীমা নির্ধারণের নিমিত্তে লাহোর প্রস্তাব পেশ করা হয়।

৩. আন্তঃস্বার্থের সঠিক মীমাংসার জন্য লাহোর প্রস্তাব পেশ করা হয়।

৪. স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য এ প্রস্তাব পেশ করা হয়।

১৯২৮ সালে প্রকাশিত নেহেরু রিপোর্ট, ১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের পর কংগ্রেস শাসিত প্রদেশসমূহে মুসলিম মন্ত্রী অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মতানৈক্য, কংগ্রেস শাসিত প্রদেশগুলোতে দলীয়করণ ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রদর্শন ভারতীয় মুসলমানদের হতাশ করে। এর ফলে মুসলমান নেতাগণ নিজেদের পৃথক অস্তিত্ব রক্ষায় সচেষ্ট হন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার দ্বি-জাতিতত্ত্ব প্রকাশ করেন। এই তত্ত্ব ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোর মুসলিম লীগ সম্মেলনে গৃহীত হয়। মূলত লাহোর প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্যই ছিল ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে উপমহাদেশের জনগণকে সুস্পষ্টভাবে দুভাগে বিভক্ত করে দুটি পৃথক সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠন।

লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্যসমূহ

উত্তল ও ভূমিকা ৪ ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ এ.কে. ফজলুল হক কর্তৃক উত্থাপিত লাহোর প্রস্তাবের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা অগ্রহণযোগ্য: 

ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, এতে নিখিল ভারত মুসলিন লীগ দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করে যে, ১৯৩৫ সালের আইনের যে সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা করা হয়েছে তা ভারতের উদ্ভুত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিত অসঙ্গত ও অকার্যকর। তাই ভারতীয় মুসলমানগণের নিকট ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা অগ্রহণযোগ্য। 

২. মুসলিম সম্মতি সংবলিত সংবিধান

১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে বলা হয় যে, প্রণিত সমস্ত সাংবিধানিক পরিকল্পনা নতুনভাবে বিবেচনা করতে হবে, নতুবা মুসলমানগণ অসন্তুষ্ট হবে। আর ভবিষ্যতে যে সংবিধান রচিত হবে তাতে অবশ্যই মুসলমানদের অনুমোদন ও সম্মতি থাকতে হবে। তা না হলে কোন সংশোধিত পরিকল্পনা মুসলমানদের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। 

৩. শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনা ব্যাপারে মুসলমানদের সম্মতিঃ

লাহোর প্রস্তাবের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে বলা হয় যে, ভারতে মুসলমানদের সম্মতি ছাড়া কোন শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনা কার্যকরী হবেনা। এতে প্রয়োজনে সীমানার পুনর্বিন্যাস সাধন ও ভৌগোলিক দিক থেকে নিকটবর্তী সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর সমন্বয় সাধনসহ ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।

৪. সংখ্যালঘুদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত:

আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই প্রস্তাবে বলা হয়, নতুনভাবে গঠিত অঙ্গরাজ্যসমূহে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শাসন সংক্রান্ত অধিকার রক্ষা করার জন্য ভারতের ভবিষ্যত সংবিধানে বিভিন্ন রকম রক্ষাকবচ উল্লেখ থাকতে হবে এবং সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

৫. অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিতকরণ:

লাহোর প্রস্তাবে বলা হয় যে, ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী পাশাপাশি সংলগ্ন বা সন্নিহিত স্থানসমূহকে বা এলাকাসমূহকে অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। 

৬. মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোর সীমানা পরিবর্তন:

ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোর জন্য প্রয়োজনে পূর্বের সীমানার পরিবত নের কথা বলা হয়।

৭. মুসলমানদের জন্য একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন:

 লাহোর প্রস্তাবে ভারতের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্ব অঞ্চলে মুসলমানদের জন্য একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠনের কথা বলা হয়।

৮. স্বায়ত্তশাসিত ও স্বাধীন অঙ্গরাজ্য:

লাহোর প্রস্তাবের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে বলা হয় যে, মুসলমানদের জন্য যে সকল স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হবে তাদের সকল প্রদেশ বা অঙ্গরাজ্যগুলো হবে স্বায়ত্তশাসিত ও স্বাধীন।

৯. সংখ্যালঘু মুসলমানদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ

 লাহোর প্রস্তাবে বলা হয় যে, নতুনভাবে গঠিত রাষ্ট্রসমূহের বাইরে ভারতের অন্যান্য জায়গায় যেখানে মুসলমানরা সংখ্যালঘু থাকবে। সেখানে মুসলমানদের সাথে পরামর্শক্রমে তাদের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক প্রশাসনিক ও অন্যান্য অধিকার এবং স্বার্থ সংবিধানে সংরক্ষণ করতে হবে।

১০. মৌলিক নীতি হিসেবে গ্রহণ:

লাহোর প্রস্তাবের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে বলা হয় যে, লাহোর প্রস্তাবে যে সকল বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো পরবর্তীতে দেশের ভবিষ্যৎ সাংবিধানিক বা শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনার থেকে মৌলিক নীতি হিসেবে গৃহীত হবে।

লাহোর প্রস্তাবের মূল বিষয় ও বৈশিষ্ট্য

[The Main Theme and the Characteristics of Lahore Resolution]

১৯৪০ সালের ২২ মার্চ পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে মুসলিম লীগের একটি অধিবেশন শুরু হয়। এ অধিবেশনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মাওলানা আকরম খাঁ, খাজা নাজিমুদ্দিন, ফজলুর রহমান, আবুল হাশিম, খাজা হাবিবুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী ভাষণে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সর্বপ্রথম সরকারিভাবে তার দ্বি-জাতি তত্ত্ব জনসমক্ষে উপস্থাপন করেন। লিয়াকত আলী খান তার সম্পাদকীয় রিপোর্ট পেশের পর ফজলুল হক তার বক্তব্য পেশ করেন। ২৩ মার্চ মুসলিম লীগের প্রকাশ্য অধিবেশনে বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ফজলুল হক ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। মুসলিম লীগের অন্যতম নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামানসহ কয়েকজন প্রতিনিধি তা সমর্থন করেন। উক্ত প্রস্তাবটি প্রকাশ্য অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। লাহোর প্রস্তাবের মূলবক্তব্য নিম্নরূপ:

১. নিখিল ভারত মুসলিম লীগ দৃঢ়তার সাথে পুনঃঘোষণা করছে যে, " ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে যে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে তা এ দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতির জন্য অনুপযোগী ও অকার্যকর বিধায় তা ভারতীয় মুসলমানদের জন্য অগ্রহণযোগ্য।"

২. "ভারতবর্ষে বিদ্যমান বিভিন্ন দল, মত ও সম্প্রদায়ের সাথে পরামর্শ সাপেক্ষে ১৯৩৫ সালের সংবিধান পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। সমগ্র সাংবিধানিক পরিকল্পনা নতুনভাবে পুনর্বিবেচনা করা না হলে মুসলিম ভারত অসন্তুষ্ট হবে এবং মুসলমানদের অনুমোদন ও সম্মতি ছাড়া সংবিধান রচিত হলে কোনো সংশোধিত পরিকল্পনাও মুসলমানদের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।"

তিনি তেজোদীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন-

৩. নিখিল ভারত মুসলিম লীগের এই অধিবেশনের সুচিন্তিত মত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাচ্ছে যে, কোনো শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনা কার্যকর হবে না বা তা মুসলমানদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, যদি তা নিম্নলিখিত মূলনীতির উপর ভিত্তি করে রচিত না হয়। যেমন-

ক. ভৌগোলিক দিক থেকে সংলগ্ন এলাকাগুলোকে সীমা নির্ধারণ করে এগুলোকে নিয়ে একাধিক অঞ্চল গঠন করতে হবে।

খ. প্রয়োজনবোধে সীমানার পুনর্বিন্যাস সাধন করে এমনভাবে সংগঠিত করতে হবে যেন ভারতের উত্তর পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের যে সব এলাকায় মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেসব এলাকাগুলোকে একত্রিত করে স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠন করা যায়। যাতে অভ্যরাষ্ট্রগুলো হবে স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম।

৪. এসব এলাকা এবং অঞ্চলের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাথে পরামর্শ করে তাদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে পর্যান্ত কার্যকরি ও বাধ্যতামূলক রক্ষাকবচের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ভারতের অন্য যে সব স্থানে মুসলমানগণ সংখ্যালঘু, সেসব স্থানে তাদের ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থরক্ষার জন্য তাদের সাথে পরামর্শ করে শাসনতন্ত্রে পর্যান্ত কার্যকরি এবং বাধ্যতামূলক রক্ষাকবচের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. এই মূল নীতি অনুযায়ী একটি শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য এই অধিবেশন কার্যনির্বাহী কমিটিকে ক্ষমতা প্রদান করেছে, অঞ্চলগুলো যাতে চূড়ান্তভাবে নিজেদের এলাকায় প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক বিষয়, যোগাযোগ, শুভ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে সকল ক্ষমতার অধিকারী হয় ।শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনায়) সেরূপ ব্যবস্থা থাকবে।

প্রস্তাবটি বিশ্লেষণ করলে এর নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়।

ক. ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা মুসলমানদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

খ. ভারতবর্ষে বিদ্যমান বিভিন্ন দলমত ও সম্প্রদায়ের সাথে পরামর্শ সাপেক্ষে ১৯৩৫ সালের সংবিধান পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।

গ. ভৌগোলিক দিক থেকে সংলগ্ন এলাকাগুলোকে পৃথক অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

ঘ. এসব অঞ্চলের ভৌগলিক সীমানা প্রয়োজন মতো পরিবর্তন করে ভারতের উত্তর পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে একত্রিত করে স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠন করতে হবে।

ঙ. এ সকল স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যসমূহ হবে স্বায়ত্তশাসিত।

চ. ভারতের অন্যান্য হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর সমন্বয়ে পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হবে।

ছ. ভারতের ও নবগঠিত মুসলিম রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর সাথে পরামর্শক্রমে তাদের সাংস্কৃতিক, শাসনতান্ত্রিক ও অন্যান্য অধিকার ও সবার্থসমূহ সংরক্ষণের পর্যান্ত কার্যকর ও বাধ্যতামূলক বিধান থাকবে।

জ. দেশের যে কোনো ভবিষ্যৎ শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনায় উক্ত বিষয়গুলোকে মৌলিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

ঝ. অঞ্চলগুলো চূড়ান্তভাবে নিজেদের এলাকার প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক বিষয়, যোগাযোগ, শুল্ক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ে সকল ক্ষমতার অধিকারী হবে।

লাহোর প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া

[The Reaction of the Lahore Resolution] লাহোর প্রস্তাবের পর ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এ প্রস্তাবের বাস্তবায়ন নিয়ে উপমহাদেশের হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিভিন্ন সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক দল বিভিন্ন ভাবে তাদের মতামত ব্যক্ত করে। নিম্নে লাহোর প্রস্তাবে ভারতের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া:

লাহোর প্রস্তাব নিয়ে কংগ্রেস তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। কংগ্রেস লাহোর প্রস্তাবকে অবান্তর ও কৃত্রিম সাবি হিসেবে আখ্যায়িত করে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত হিন্দু পত্রিকাগুলো সাহোর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তাদের লেখনী ধারণ করে এবং তারাই সর্বপ্রথম এ প্রস্তাবকে পাকিস্তান প্রস্তাব হিসেবে আখ্যায়িত করে। কংগ্রেসের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দও এ প্রস্তাবের বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন। কংগ্রেসের অন্যতম কান্ডারী মহাত্মা গান্ধী ভারত বিভাগকে অন্যায় ও পাপ কাজ বলে অভিহিত করেন। মহাত্মা গান্ধী লাহোর প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, "যদি আমরা শ্রী জিন্নাহর অভিমতকে গ্রহণ করি, তাহলে বাংলাদেশ ও পাঞ্জাবের মুসলমানরা দুটি স্বতন্ত্র ও পৃথক জাতি হয়ে পড়ে।" কংগ্রেসের সভাপতি পণ্ডিত জওহর লাল নেহেরু গান্ধীজীর মতো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি এ প্রস্তাবকে অবান্তর বলে দাবি করেন। কংগ্রেস লাহোর প্রস্তাব থেকে মুসলিম লীগকে সরিয়ে আনার কৌশল হিসেবে মাওলানা আবুল কালাম আজাদকে কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন।

২. মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়া:

মুসলিম লীগ লাহোর প্রস্তাব অনুমোদনের পর একটি কুচক্রীমহল এর বাস্তবায়ন নিয়ে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেন। তারা দেখেন যে, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ঘোষিত লাহোর প্রস্তাব যদি হুবহু বাস্তবায়িত হয় তাহলে পূর্ব বাংলার উপরে পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলিম লীগ নেতাদের কোনো কর্তত্ব থাকবে না। তাই তারা লাহোর প্রস্তাব সংশোধন করেন। একাধিক মুসলিম রাষ্ট্রের শলে একটি মাত্র মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এতে করে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল যে উদ্দেশ্য নিয়ে লাহোর প্রস্তাব পেশ করেন তা ব্যাহত হয়। মুসলিম লীগ নেতাদের এরূপ সিদ্ধান্তের ফলে পূর্ব বাংলার জনগণ হতাশ হয়ে পড়ে। কারণ তারা আশা করেছিলেন যে, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক যে প্রস্তাব পেশ করেছেন তার ফলে বাংলার মুসলমানদের হাতে ক্ষমতা আসবে। তারা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত হয়ে নিজেরা সার্বভৌম ক্ষমতা চর্চা করবে। নিজেরা নিজেদের জন্য শাসনতন্ত্র রচনা করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পূর্ব বাংলার মুসলমানরা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পক্ষে রায় দেন কারণ তাদের বোঝানো হয়েছিল যে যদি মুসলমানরা। ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের নিজেদের জন্য আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না করে তাহলে কংগ্রেসী শাসনের যাঁতাকলে তাদের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে। তাই ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার জনগণ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পক্ষে তাদের রায় প্রদান করে। এভাবে শেষ পর্যন্ত লাহোর প্রস্তাবের সংশোধনীর ভিত্তিতেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়।

ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি ক্রাইয়ের নামে বাঙালি হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলে মুসলমানদের বসবাস ছিল। শেরে বাংলা কর্তৃক ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবনের সকল কিছু তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তারা আশঙ্কা করে যে, যদি লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভারহৈণ করে। মুসলমান অধ্যুষিত এলাকার ভিত্তিতে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে ভারতের যে সব অঞ্চলে মুসলমানরা সংথেকে রয়েছে তাদের অস্তিত্ব বিনাশ হবে। এর ফলে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সহ যে সব মুসলমান নেতৃবৃন্দ মুসলিম লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না তারা লাহোর প্রস্তাবের ফলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ভারতীয় জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার তথা একটি 'অখন্ড ভারত' প্রতিষ্ঠার দাবীতে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। এ প্রসঙ্গে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, " আমি একজন ভারতীয় হওয়ায় গর্বিত। আমি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অবিভাজ্য অংশ। আমরা পছন্দ করি কি না করি, আমরা এখন একটি ঐক্যবদ্ধ ভারতীয় জাতিতে পরিণত হয়েছি। আমাদের পৃথক ও বিভক্ত করার জন্য দেয়াল বা অকৃত্রিম পরিকল্পনা এই ঐক্যকে ভাঙ্গতে পারবে না।" এছাড়া জমিয়তে উলামা হিন্দের নেতা মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী লাহোর প্রস্তাবের বিরোধীতা করেন। তারা একটি অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা অনেক কম হওয়াতে শেষ পর্যন্ত মুসলিম লীগের চাপের মুখে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এগিয়ে যায়।

লাহোর প্রস্তাবের সংশোধনী

লাহোর প্রস্তাব পেশের পরের দিন এ প্রস্তাবকে কতিপয় নেতা পাকিস্তান প্রস্তাব বলে অভিহিত করেন। কিন্তু লাহোর প্রস্তাবের কোথায়ও ‘পাকিস্তান’ শব্দটির উল্লেখ ছিল না। লাহোর প্রস্তাবের প্রণেতাগণ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করার কথা বলা হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত একাধিক রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব নিয়ে মুসলিম নেতৃবৃন্দের তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। মুসলিম লীগের কনভেনশনে মূল লাহোর প্রস্তাবের "রাষ্ট্রসমূহ" কথাটি বাতিল করে "একটি মাত্র রাষ্ট্র" স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে তার যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেন। তিনি সবলকে বুঝানোর চেষ্টা করেন যে, টাইপের ভুলে State এর সাথে যুক্ত হয়েছে। অথচ মূল লাহোর প্রস্তাব পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, একাধিক জয়গায় States শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। পূর্ববঙ্গের নেতৃকৃন্দ এতে ক্ষুদ্ধ হন এবং তারা একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। কিন্তু মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং দলে তার অসামান্য প্রভাবপত্তির কারণে জিন্নাহর একটি মাত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবের বিপক্ষে জনমত গড়ে তোলা কোন নেতার পক্ষে সম্ভব হয়নি। ফলে পূর্ববকোর মুসলিম নেতৃবৃন্দের পূর্ববঙ্গ ও আসামকে নিয়ে যে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি করে তা ক্রমান্বয়ে চাপা পড়ে যায়। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিমলীগ জয় লাভ করলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চাঙা হয়ে ওঠে। পূর্ববকোর তৎকালীন এক শ্রেণির কায়েমি সর্বার্থবাদী নেতার কারণে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের অংশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সংশোধিত লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী একটি স্বাধীন রাষ্ট্র "পাকিস্তান" প্রতিষ্ঠিত হয়।

লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব

[The Importance of the Lahore Resolution]

১. শাসনতান্ত্রিক আন্দোলনের নবদিগন্ত উন্মোচিত: লাহোর প্রস্তাবের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয়। লাহোর প্রস্তাব গ্রহণের পূর্বে মুসলিম লীগের রাজনীতি কংগ্রেস ও ব্রিটিশ সরকারের সাথে আপোষ মীমাংসা করে চলার গণ্ডিতে আবদ্ধ ছিল। কিন্তু লাহোর প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে মুসলমানরা ভারতের স্বায়ত্তশাসনের দাবি পরিত্যাগ করে নিজেদের পৃথক রাষ্ট্রগঠনের দাবি জানায়।

২. স্বতন্ত্র জাতিসত্তার বিকাশ: লাহোর প্রস্তাব প্রমাণ করে যে, ভারতের হিন্দু ও মুসলমানগণ এক জাতি নয়। তারা দুটি পৃথক জাতি। সুতরাং, এক জাতি এবং এক রাষ্ট্র নীতির ভিত্তিতে মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র দরকার।

৩. মুসলমানদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি: স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশায় ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সঞ্চার হয়। লাহোর প্রস্তাব গ্রহণের পরবর্তী সময়ে মুসলিম লীগের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়তে থাকে। এ প্রস্তাব মুসলমানদের নতুন আশায় উদ্দীপিত করে এবং তাদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটে।

৪. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট: লাহোর প্রস্তাব হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক বিনষ্ট করে। হিন্দু নেতৃকূপ লাহোর প্রস্তাবকে মেনে নিতে অস্বীকার করে। মহাত্মা গান্ধী লাহোর প্রস্তাবকে "ভারত বিভাগকে ষড়যন্ত্র" এবং একে 'পাপ কাজ' বলে অভিহিত করেন। পন্ডিত জওহর লাল নেহেরু বলেন যে, লাহোর প্রস্তাব করে মুসলিম লীগ ভারতে ইউরোপের বলকান অঞ্চলের মতো বহু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি করেছে।

৫. পাকিস্তান সৃষ্টি: ১৯৪৬ সালের জিন্নাহর সভাপতিত্বে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের লেজিসলেটিভ কনভেনশনে মুসলমানদের একাধিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে এক পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গৃহীত হয়। লাহোর প্রস্তাব ছিলো মুসলমানদের জন্য বড় বিজয়। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরাট সাফল্য এর জ্বলন্ত প্রমাণ। এর ফলে ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

লাহোর প্রস্তাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ নিহিত

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর প্রভাবে ও পূর্ব বাংলার কতিপয় মুসলিম নেতার অতি অগ্রহের কারণে সংশোধিত লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হয়। তদানুসারে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু পাকিস্তানের পূর্বাংশ অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের লোকেরা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পরই হতাশ হয়ে পড়ে। ভারতের পূর্ব ও উত্তর পশ্চিমাংশের   পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পাঞ্জাবীদের শাসন অত্যাচারে পূর্ব বাংলার জনজীবন অতীষ্ঠ হয়ে পড়ে। তারা ভাইয়ের নামে বাঙালি মুসলমানদের শাসনের পরিবর্তে শোষণ পরিচালনা করে। তাছাড়া পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে পাকিস্তানের সকল কিছু পশ্চিম পাকিস্তানীদের দখলে চলে যায়। তারা পূর্ব বাংলাকে তাদের উপনিবেশে পরিণত করার সকল প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। পাকিস্তানের প্রথম গর্ভনর জেনারেল, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সকল প্রশাসনিক ইউনিটের প্রধান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নিযুক্ত করা হয়। সকল প্রশসানিক কর্মকান্ডের কেন্দ্র কিছু করা হয় পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি, লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি প্রভৃতি শহরকে ঘিরে। রাজধানী করাচি থেকে নির্দেশনা অনুসারে শাসন কার্য পরিচালিত হতে থাকে। এ ক্ষেত্রেও তারা বাঙালিদের বঞ্চিত করে। তবে এ সব নির্দেশনা কোনো সময়ই বাঙালি জনগণের পক্ষে ছিল না বরং তারা বাঙালিদের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন কাজে লিপ্ত ছিল।

আবার পূর্ব পাকিস্তানের জন্য যে প্রাদেশিক সরকার নিযুক্ত হয় তারাও ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের আজ্ঞাবহ। পূর্ববঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তারা খাজা নাজিমুদ্দিনকে নিযুক্ত করেন। কিন্তু খাজা নাজিমুদ্দিন পাকিস্তানের তল্পিবাহক ও অযোগ্য ছিলেন। তিনি কখনো বাঙালি জনগণের স্বার্থরক্ষার জন্য কাজ করতেন না।। তিনি সর্বদা কায়েমি বার্থবাদীদের পক্ষে কাজ করতেন। তাছাড়া খাজা নাজিমুদ্দিন বলতে গেলে পূর্ব পাকিস্তানে পরিবারতন্ত্র কায়েম করেছেন। তিনি ক্ষমতা পেয়ে তার পরিবারের লোকজনদেরকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। এ সময়ে খাজা পরিবারের প্রায় ১১ জনকে তিনি মন্ত্রী ও আইনসভার সদস্য পদে নিযুক্ত করেন। তিনি তার সহোদর খাজা শাহাবুদ্দিনকে মন্ত্রী নিয়োগ করেন যা ছিল সকলের নিকট অগ্রহণযোগ্য।

এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী অবিভক্ত বাংলার শেষ মুখ্যমন্ত্রীর পন অলঙ্কৃত করলেও তাকে পূর্ববক্কোর মুখ্যমন্ত্রীর পদ প্রদান করা হয় নি। মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ষড়যন্ত্র করে তাদের কায়েমি স্বার্থ রক্ষার জন্য খাজা নাজিমুদ্দিনকে পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত করে এবং বাংলার জনপ্রিয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার সকল হীন চক্রান্তে লিপ্ত হয়। অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ও লাহোর প্রস্তাবের উত্থাপক শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হককে পর্যন্ত তারা কোনো যোগ্য পদে আসীন করেন নি। এমন কী তারা ফ্রেডরিক বোর্নকে পূর্ব বাংলার গভর্নর নিযুক্ত করেন।

ফলে পাকিস্তান সৃষ্টির অল্পকালের মধ্যে বাঙালিদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করে। পরবর্তীকালে বাঙালিরা লাহোর প্রস্তাবভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে স্বোচ্চার হয়ে পড়ে। পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাংলার স্বাধিকারের দাবীতে যে সব আন্দোলন পরিচালিত হয় সেগুলোর প্রায় সবগুলোতে লাহোর প্রস্তাবকে সামনে টেনে আনা হয়। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক যে ছয় দফা দাবী প্রণয়ন করা হয় সেখানে লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধিকারের দাবী মেনে নেয়ার আহবান জানানো হয়। এ দাবির প্রেক্ষিতে আস্তে আস্তে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারা সুদৃঢ় হতে থাকে এবং ১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেয়। এখানে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, শেরে বাংলা তার লাহোর প্রস্তাবে যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাসমূহ নিয়ে যে একাধিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন তার অংশ হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই একথা আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে, লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যেই স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল।

উপসংহার

উপরোক্ত আলোচনার পরিপেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব বৃটিশ ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে এক মাইল ফলক হিসেবে বিবেচিত। এরই ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের পরিসমাপ্তিতে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মলাভ করে। প্রস্তাব শেষে বাংলা যিনি পেশ করেছেন বাঙালির প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও দেশের প্রতি ভালবাসার এক বিমূত্র প্রতীক হিসেবে তাকে তার এই ঐতিহাসিক সৎ উদ্দেশ্যের প্রস্তাবের জন্য আজকের বাংলাদেশ তার কাছে চিরঋনী। উপযুক্ত পটভূমি ও লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্যসমূহের আলোচনা থেকে এ কথা সুস্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় লাহোর প্রস্তাব এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। ভারতীয় মুসলমানগণ বিভিন্ন সময়ে হিন্দুদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে এক উপলব্ধি করতে সচেষ্ট হন যে, পৃথক আবাসভূমি ছাড়া তাদের সামনে বিকল্প কোন পথ নেই। মুসলমানদের এই চিন্তাধারার ফলশ্রুতিই হচ্ছে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব। লাহোর প্রস্তাবই মূলত স্বাধীন সার্বভৌম মুসলিম পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।


FAQ

১। লাহোর প্রস্তাব কি ছিল?

উত্তরঃ লাহোর প্রস্তাব হচ্ছে, উপমহাদেশের উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলীয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাসমূহের মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্রসমূহ গঠিনের সিদ্ধান্ত। আঞ্চলিক স্বাধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার ও সার্বভৌমত্ব অর্জনই ছিল এ হালোর প্রস্তাবের মূল কথা।

২। লাহোর প্রস্তাব কে উত্থাপন করেন?

উত্তরঃ এ. কে. ফজলুল হক।


এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।

Next Post Previous Post
মন্তব্যগুলো দেখান
মন্তব্যগুলো যোগ করুণ

আপনার মূল মান মতামতটি আমাদের জানান। আমি শালীন ভাষা ব্যাবহার করবো এবং অশ্লীল ভাষা ব্যাবহার থেকে বিরত থাকবো। কৌণিক বার্তা.কম আপনার আইপি অ্যাড্রেস ব্লকের ক্ষমতা রাখে।

comment url
Hey come check out this great beauty product!
Product Name:  Neeta Natural Henna Mehandi Cone 12pis -Indian